হিজবুল্লাহর পেজারে বিস্ফোরণে অনুমোদনের কথা স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু
- By Jamini Roy --
- 11 November, 2024
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের ব্যবহৃত পেজারে বিস্ফোরণ ঘটানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে অবশেষে স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রোববার (১০ নভেম্বর) ইসরায়েলের সরকারের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু লেবাননে এই বিস্ফোরণ ঘটানোর সিদ্ধান্তে সম্মতি দেন বলে জানা গেছে।
হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে জরুরি বার্তা আদান-প্রদানের জন্য পেজার ব্যবহার করতো, যা একসময় যোগাযোগের পুরোনো মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ছিল। গত সেপ্টেম্বরে লেবাননে ৪ হাজার পেজারে একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটায় ইসরায়েল। এই হামলায় ৪০ জন নিহত এবং ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হন। হিজবুল্লাহ ও ইরান এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল। ইসরায়েল তখন এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও, অবশেষে নেতানিয়াহু এই হামলার অনুমোদন দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুসারে, এই স্বীকারোক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
এই বিস্ফোরণকে মানবতার বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে আখ্যা দিয়ে লেবানন জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। জাতিসংঘের কাছে তারা দাবি করেছে, এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শামিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দফতরের মুখপাত্র ওমের দোস্ত্রি বলেন, "নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে তিনি হিজবুল্লাহর পেজারকে লক্ষ্য করে অপারেশন চালানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন।"
এদিকে, গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। রবিবার ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জাবালিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। একইসঙ্গে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে।
গাজা যুদ্ধের ৪০০তম দিন উপলক্ষে ইসরায়েলের জনগণ তেল আবিবের রাস্তায় নেমে বন্দিমুক্তির দাবি জানায়। তারা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের পদত্যাগ এবং যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। বিক্ষোভকারীরা ইঙ্গিত দেন যে, কাতার মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা থেকে সরে যাওয়ায় বন্দিমুক্তির বিষয়টি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ আলোচনা ও চেষ্টা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির কোনো চুক্তি না হওয়ায় সাধারণ মানুষ নেতানিয়াহু প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
এদিকে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির কাছে একটি পেজার থাকার তথ্য নিয়ে বিতর্ক চলছে। ইরানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আহমদ বখশায়েশ আরদেস্তানি দাবি করেন যে, ইসরায়েল হয়ত সেই পেজারের মাধ্যমেও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিল। এই বিষয়ে ইসরায়েল কিছু জানায়নি, তবে নেতানিয়াহুর পেজারে বিস্ফোরণ অনুমোদনের স্বীকারোক্তির ফলে এই দাবি আরও বেশি আলোচনায় এসেছে।
ইসরায়েলের এই স্বীকারোক্তি এবং হামলার ঘটনা নতুন করে লেবানন ও গাজার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।